প্রতি বছর হিজরি নববর্ষের প্রথম প্রহরে পরিবর্তন করা হয় পবিত্র কাবার গিলাফ। কাবার গিলাফ পরিবর্তন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী একটি রীতি।
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানরা অধীর আগ্রহে কাবার গিলাফ পরিবর্তনের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করেন।
জেনারেল অথরিটি ফর দ্য কেয়ার অব মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী, কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর কিসওয়ারতত্ত্বাবধানে কাবায় নতুন গিলাফ পরানো হয়।
গিলাফটি খাঁটি রেশমে তৈরি এবং এতে সোনা ও রুপা দিয়ে সূক্ষ্মভাবে সূচিকর্ম করা থাকে। পুরো কাজ সৌদি কারিগরদের হাতে তৈরি করা হয়।
কাবার নতুন গিলাফে থাকে ৪৭টি কালো রেশমের খণ্ড এবং এতে সূচিকর্ম থাকে ৬৮টি কোরআনের আয়াত। আয়াতগুলো ২৪ ক্যারেট সোনায় প্রলেপিত রুপার সুতো দিয়ে তৈরি করা হয়।
কাবার পুরোনো গিলাফ কোথায় যায়?
কাবার গিলাফে কাবার সূক্ষ্ম সূচিকর্ম করা কোরআনের আয়াত থাকে। তাই গিলাফ নামানোর সময় খুব যত্ন নেওয়া হয় ।
কাবার গায়ে নতুন গিলাফ উঠানোর পর পুরোনো গিলাফকে ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়। এরপর হারামাইন কর্তৃপক্ষ তা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারি সংস্থা ও দূতাবাসের মাঝে মূল্যবান উপহার হিসেবে বিতরণ করে।
অন্য অংশগুলো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক জাদুঘরে পাঠানো হয়।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, বা রাষ্ট্রদূতদের অফিসে এসব গিলাফের টুকরোর তৈরি সৌন্দর্যমণ্ডিত ফ্রেম ঝুলানো দেখা যায়, এটি সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের ধর্মীয় সংযোগের নিদর্শন বহন করে।
কাবা শরীফ ও এর গিলাফের প্রতি সৌদি আরবের এই যত্নশীল আজকের নয়। সৌদি প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ-এর সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে তা চলমান।
১৯২৭ সালে সৌদি প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মক্কায় কাবার গিলাফ তৈরির প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৭৭ সালে এটি স্থানান্তরিত হয়ে মক্কার উম্মুল জুদএলাকায় কারখানা ফর কিসওয়াতুল কাবা নামে রূপান্তরিত হয়।
কাবার পুরোনো গিলাফ সংরক্ষণ করে নিজেদের কাছে রাখেন না, বা নষ্ট এটি করা হয় না। বরং তা ধর্মীয় সম্মান ও কূটনৈতিক সৌজন্যের নিদর্শনে হিসেবে ব্যবহার করা।
সূত্র : আল আরাবিয়া