প্রায় এক মাসব্যাপী চলা প্রথমবারের মতো নতুন ফরম্যাটে ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ নিউ ইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে পিএসজি ও চেলসি। এই মৌসুমের দুটি ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন তারা। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে ফরাসি ক্লাব পিএসজি, অন্যদিকে কনফারেন্স কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে এসেছে চেলসি। কোচ এনজো মারেসকার অধীনে টুর্নামেন্টে দারুণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে চেলসি।
অন্যদিকে ক্লাব বিশ্বকাপে লুইস এনরিকের পিএসজি ছিল একেবারে ভিন্ন মাত্রায়—ছয় ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করে অ্যাতলেতিকো, বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের মতো জায়ান্টদের অনায়াসে হারিয়ে এসেছে তারা।
পিএসজির উইং অ্যাটাক কীভাবে ঠেকাবে চেলসি?
পিএসজি সবসময় চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে উইং থেকে আঘাত করতে। তারা মাঝমাঠ কম ব্যবহার করে, ফ্ল্যাঙ্কে খেলা গড়তে ভালোবাসে। ডেম্বেলে, বারকোলা, খভিচা বা দিজিরে দুয়ের মতো ড্রিবলারদের যেকোন একজনই প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে সক্ষম।
আর্সেন ওয়েঙ্গার বলেছেন, ‘পিএসজির খেলোয়াড়রা পাস দেয়ার আগে ওয়ান-অন-ওয়ান লড়াই পছন্দ করে। এটাই তাদের আলাদা করে।’
পরিসংখ্যানেও মিলছে এই চিত্র—দুয়ে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ৪১ বার টেক-অন করেছেন, এরপর খভিচা (৩৪) ও বারকোলা (২২)।
ব্রাজিলের দল বোটাফোগোর মতো চেলসি যদি রক্ষণে বেশি সময় কাটিয়ে ঠিক সময়ে পাল্টা আক্রমণে যায়, তবে সাফল্যের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
পিএসজির দিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকতে হবে চেলসিকে
পিএসজি বল এক পাশে জড়ো করে হঠাৎ বিপরীত দিকে ‘সুইচ’ করতে পছন্দ করে। তারা ক্লাব বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে ৫৭ বার বলের দিক বদল করেছে, যা টুর্নামেন্টের রেকর্ড।
যেমন, ইন্টার মায়ামির বিপক্ষে লেফট ব্যাক নুনো মেন্দেস বাঁদিক থেকে বল খেলিয়ে বারকোলার কাছে পাঠান ডানদিকে। এরপর দ্রুত হামলা চলে প্রতিপক্ষের অরক্ষিত অংশে।
ফুল-ব্যাকদের ভূমিকা হতে পারে ম্যাচ নির্ধারক
মারেসকা এই টুর্নামেন্টে রেকর্ড ২৭ জন খেলোয়াড়কে মাঠে নামিয়েছেন।
তবে আজ তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে ফুল-ব্যাক নির্বাচন।
কুকুরেয়া ও রিস জেমস থাকলে চেলসি একভাবে আক্রমণে গতি আনে, আবার মালো গুস্তো খেললে ভিন্ন রূপে আক্রমণে যায় দলটি। প্রতিপক্ষ পিএসজির দুই ফুল-ব্যাক হাকিমি ও মেন্ডেস নিজেরা বেশ উপড়ে উঠে বল দখলে রেখে আক্রমণ গড়েন, তাই চেলসির ফুল-ব্যাকদের ভূমিকা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, চেলসি যদি পিএসজিকে মাঝমাঠে থামাতে পারে, তবে পাল্টা আক্রমণে সুযোগ তৈরি হতে পারে। এই টুর্নামেন্টে চেলসি সবচেয়ে বেশি ১৯টি ‘ডিরেক্ট অ্যাটাক’ করেছে, যার ৬টি থেকে গোল এসেছে।
তবে পিএসজির ক্ষমতা আছে মুহূর্তেই প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার। তাই আক্রমণে যেতে হলে চেলসিকেও ঝুঁকি নিতে হবে।
ফলাফল কী হতে পারে?
‘দ্য অ্যাথলেটিক’–এর পরিসংখ্যানভিত্তিক ম্যাচ প্রেডিকশন মডেল বলছে, পিএসজির জয়ের সম্ভাবনা ৬৪ শতাংশ, চেলসির ১৬ শতাংশ এবং ড্র হওয়ার সম্ভাবনা ১৯ শতাংশ।
সবচেয়ে সম্ভাব্য স্কোরলাইন ধরা হয়েছে ২-১ পিএসজি জয়ে। তবে ইন্টারকে ৫-০ আর মাদ্রিদকে ৪-০ ব্যবধানে হারানো পিএসজি চাইলে যে কোনো সময় স্ক্রিপ্ট বদলে দিতে পারে।
আজকের ম্যাচটি হতে যাচ্ছে কৌশলের লড়াই। কে জিতবে—লুইস এনরিকের পরীক্ষিত পরিকল্পনা, নাকি মারেসকার সাহসী পরিবর্তন?