রাজস্ব তহবিল থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও মানিলন্ডারিং অপরাধের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বৃহস্পতিবার কমিশন থেকে মামলা অনুমোদন দেওয়ার পর রোববার (৩ আগস্ট) মামলা দায়ের হতে পারে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে।
অনুমোদন নথি সূত্রে জানা যায়, সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, পরস্পর যোগসাজসে ভুয়া টেন্ডার ও বিল প্রস্তুতপূর্বক নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে সরকারি উন্নয়ন তহবিল ও সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব তহবিল থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পাচারের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবেন বলে জানা গেছে।
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০২৩ সালের জুন মাসে কয়েক দফায় তলব করে চিঠি দিলেও হাজির হননি। যদিও ২০২৩ সালের ২১মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তখন জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
তিনি দাবি করেছিলেন, সরকার আমাকে দুটি প্রজক্টে মাত্র ৬০০-৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু দুদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা কী করে সম্ভব? এটা কাল্পনিক, বানোয়াট ও মিথ্যা। আমাকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে। যারা মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
ভুয়া ব্যাংক হিসাবে টাকা অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক আলী আকবরের নেতৃত্বে অনুসন্ধান টিম কাজ শুরু করে। টিমের অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলিয়াজ হোসেন ও মো. আশিকুর রহমান।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্র জানা যায়, গাজীপুর সিটি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছেন।
এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ও কয়েকজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ওই প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।