সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর লুটপাটের রেশ থাকতেই নতুন করে আলোচনায় প্রকৃতিকন্যা খ্যাত জাফলং। সেখানে এখন চলছে গোগ্রাসে পাথর লুট।
গোয়াইনঘাট উপজেলার পাহাড়ি নদীর বুক চিরে বেলচা, কোদাল, শাবল কোপের পর বারকি নৌকা দিয়ে পাথর ও বালু তোলা হচ্ছে অবাধে। প্রশাসনের নজরদারি শিথিল থাকায় দুর্বৃত্তদের এমন তৎপরতা বেড়েই চলেছে।
আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) এমন চিত্র ছিল জাফলংয়ের। গত বছর গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক মাস ধরে রাতের আঁধারে পাথর লুট হলেও সম্প্রতি দিনের আলোয় পাথর উত্তোলন শুরু হয়। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বিলীন হয়ে যেতে পারে এই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের স্বকীয় রূপ।
গত কয়েক মাসে জাফলং এলাকায় পাথর লুটপাটের ফলে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সাদা বড় বড় পাথরগুলো এখন আর নেই। পড়ে আছে কালো পাথর। পাহাড়ি ঝরনা, সবুজ পাহাড় আর নদীর বুক জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাথরের সৌন্দর্য দেখতে দূদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক।জাফলংয়ে কথা হয় নোয়াখালী মাইজদী থেকে পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসা ডা. বিশ্বজিতের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে সাদা পাথরের লুটপাটের চিত্র দেখে হতাশ হয়ে জাফলংয়ের সৌন্দর্য দেখতে আসলাম। এখানে এসেও দেখি বড় পাথরগুলো গায়েব। অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে হারিয়ে যাবে সিলেট অঞ্চলের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।’ কে বা তারা এই প্রকৃতিকে নষ্ট করছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এ ভ্রমণপিপাসু।জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরেই জাফলংয়ে মাঝরাতে পাথর লুটপাট হচ্ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি সাদাপাথরে দিনের আলোতে লুটপাট হওয়ার দৃশ্যের পর জাফলংয়েও দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন করতে শুরু করছে। এখানের সৌন্দর্য ধরে রাখতে আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রশাসন যদি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে জাফলংয়ের সব পাথর লুটপাট হয়ে যাবে।’স্থানীয় ফটোগ্রাফার করিম আহমদ বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে জাফলংয়ে যেভাবে পাথর লুটপাট হয়েছে এতে এখানের বড় বড় সাদা পাথরগুলো হারিয়ে গেছে। জাফলংয়ের সৌন্দর্যের আকর্ষণ ছিল বড় বড় সাদা পাথরগুলো। এখন সেগুলো নেই, আছে সব কালো পাথর।’
ভ্রমণপিপাসু ও স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের নজরদারি যেন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাথর লুটপাট বন্ধ করা। তা না হলে সাদা পাথরের মতো বিরাণভূমি হতে পারে জাফলং। এখন দেখার অপেক্ষা সরকার ও প্রশাসন কতটুকু রক্ষা করতে পারে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ স্পটকে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে পাথর নেয়নি। কিছু নিয়েছে। বিশেষ করে জাফলংয়ের নদীর পাড়ের সাইড থেকে কিছু বালু ও পাথর নিয়ে গেছে। বাকিটা আমরা রক্ষা করে ফেলেছি। আমি যখন থেকে জেনেছি, তখন থেকে রাতেও থাকছি, নজরদারি করছি।’
সাদাপাথরের মতো অবস্থা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি। স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারা কথা দিয়েছে পাথরে হাত দেবে না। আমাদের টহলও জোরদার আছে। আশা করছি আমাদের এখানে সাদাপাথরের মতো কিছু ঘটবে না।’
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।