কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা নির্বাচনে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত শুক্রবার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ চত্বরে সম্মেলনের পর ভোট গ্রহণ করে রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তবে ফলাফল মানতে নারাজ সভাপতি পদে পরাজিত এক প্রার্থী। তিনি ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।
আজ রোববার দুপুরে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরাজিত সভাপতি প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভোট অদৃশ্য শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। আগে থেকেই আমাকে হারানোর পরিকল্পনা ছিল। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি আন্দোলন চালিয়ে যাব। আগামী ১ জুলাই দলীয় কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।’
তবে কাজল মাজমাদারের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির ২১টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়। শুক্রবার কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ চত্বরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৪৯১ জন। সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। রাত ১০টায় ঘোষিত ফলাফলে এ কে বিশ্বাস বাবুকে সভাপতি ও কামাল উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী সভাপতি এ কে বিশ্বাস পান ৬১১ ভোট। নিকটতম প্রার্থী কাজল মাজমাদার পান ৫৯৫ ভোট।
ফলাফল ঘোষণার পর কাজল মাজমাদার ও তাঁর সমর্থকেরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি ভোট পুনর্গণনার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে তাঁরা কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অবস্থান নেন। পরে নির্বাচন কমিশনার জেলা বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মজিদ জেলা বিএনপির নেতাদের উপস্থিতিতে আবার ভোট গণনা করেন। সেখানে বাতিল হওয়া ভোটের মধ্যে ৪টি ভোট কাজল মাজমাদার পান। ফলে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯৯।
এ নিয়ে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় পদবঞ্চিত নেতাদের ব্যানারে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন নেতা-কর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, জেলা বিএনপির দুই নেতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। ব্যালট পেপার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনারের যোগসাজশে ভোট চুরি করা হয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা আদালতে যাবেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বশিরুল আলম বলেন, ‘এই চুরির ভোটের কারণে আগামী নির্বাচনে আমাদের ওপর জনগণের বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। দলের চরম ক্ষতি হচ্ছে। আজ যে বিবাদ তৈরি করা হলো, তাতে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।’
কাজল মাজমাদার বলেন, ‘আগে থেকে প্ল্যান ছিল। আমার দলের মধ্যে ভোটের অধিকার যদি না পাই, কার কাছে পাব। তার মতো (জাকির সরকার) মানুষ কেন করল? সে (জাকির হোসেন সরকার) আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি হারি নাই, হারানো হয়েছে। প্রতারণা করা হয়েছে। আবার আন্দোলন চলবে। আগামী ১ জুলাই বিএনপি কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।’
ব্যালট পেপারের টুকরা নিয়ে বিক্ষোভ
এদিকে সংবাদ সম্মেলন চলার সময় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের ভেতর বেশ কিছু ব্যালট পেপারের টুকরা পাওয়ার খবর আসে। পরে কাজল মাজমাদারসহ সাংবাদিকেরা সেখানে যান। ছাত্রাবাসের ভেতরে পড়ে থাকা টুকরা ব্যালট পেপার জোড়া লাগালে চেয়ার প্রতীকে (কাজল মাজমাদারের প্রতীক) সিল মারা দেখা যায়।
এ সময় কাজল মাজমাদারসহ তাঁর অনুসারীরা শহরে ব্যালট পেপারের টুকরা অংশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। কাজল মাজমাদার মিছিলে নেতৃত্ব দেন। এ সময় ‘ভোট চোর, ভোট চোর, জাকির সরকার ভোট চোর’; মানি না মানব না, চুরির ভোট মানি না’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
- জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবেই ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। কারচুপির অভিযোগ সঠিক নয়। কাজল মাজমাদারের আবেদনে আবার ভোট গণনা করা হয়। সেখানে চার ভোট বেশি পান তিনি। সবকিছু মেনে নিয়ে তিনি চলে যান। এরপর কেন এমন করছেন, তা বোধগম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘একটা বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’
কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি পদে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন