রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে অনুদানের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠেছে। চব্বিশের ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই ৩৬, মুক্তির উত্সব’ কনসার্ট আয়োজনের জন্য ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭৬ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ইতোমধ্যেই রাজশাহী সিটি করপোরেশন তাদের দুই লাখ টাকা প্রদান করেছে। ৫ আগস্ট এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে চরম সমালোচনার।
এই বিষয়ে সালাউদ্দিন আম্মার নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, অন্তত ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের দেওয়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব সুপারিশও করেছেন।
অনুদান চাওয়া জুলাই ৩৬ কনসার্টে আয়োজক হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা’ নামে একটি দলের পরিচালক কেএসকে হৃদয়ও রয়েছেন।
রাসিকে দেওয়া আবেদনের প্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের দুই লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে, অনুদান প্রদানের বিষয়ে জানতে রাসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক খোন্দকার আজিম আহমেদকে দুদিনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। রাসিক সচিব রুমানা আফরোজের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে, টাকা দেওয়ার ছাড়পত্রে সই থাকা রাসিকের বাজেট কাম হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই বিষয়গুলো প্রশাসক স্যার দেখেন। আমি দেখি না। তাই বলতে পারছি না।’
ভাইরাল হওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসাবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই : মুক্তির উত্সব’। এই উত্সবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সম্মানিত সমন্বয়করা উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো। এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান কামনা করছি। আপনাদের সহযোগিতা পেলে এই আয়োজন আরও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
ভাইরাল হওয়া চিঠিটি ছাড়াও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও ওয়ালটনের কাছেও আর্থিক অনুদান চাওয়া চিঠি পাওয়া গেছে। ওই চিঠিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের সুপারিশ রয়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া চিঠি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইন পোস্টে লেখেন, এই আয়োজন কারা করছে সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই নিয়ে একটা সিনেমার বিষয়ে সহায়তার জন্য আমরা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গেছিলাম কিন্তু তিনি কোনো সহায়তা করেননি। অথচ এখানে কনসার্ট হবে সেখানে তিনি কীভাবে সহায়তা দেন?
আরেক ফেসবুক পোস্টে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাফিউল ইসলাম লিখেছেন, ‘জুলাই-অভ্যুত্থানে এখনো অসংখ্য আহত তাদের চিকিত্সা করতে পারেননি। সরকারি টাকায় উদযাপনের আগে তাদের চিকিত্সা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই আন্দোলনে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং একক ক্রেডিট নিয়ে সরকারি টাকায় জুলাই উদযাপন করা জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে মোনাফেকি করার নামান্তর।’
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমাদের দেওয়া রাসিকের চিঠিটি নিয়ে মিডিয়াগুলো সংঘবদ্ধ হয়ে মিডিয়া ট্রায়াল চালাচ্ছে, নোংরামি করা হচ্ছে। অথচ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, ওয়ালটন, যমুনা ব্যাংক, সুলতানস ডাইনসহ প্রায় ৭০টি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে আমরা প্রপোজাল দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের সুপারিশ নিয়ে, যথাযথ নিয়ম মেনেই প্রপোজাল দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য প্রতিটি প্রপোজালে সিল, স্বাক্ষর দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনে আমরা চিঠি দিয়ে বলেছিলাম আপনাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করা যায় আপনারা করবেন। আমাদের ব্যানার হবে ৬৮ থেকে ৭২ পর্যন্ত সব ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজন। এর আগেও রাসিক বিভিন্ন সংগঠনকে অর্থায়ন করেছে। আয়োজনটা যেন না করতে পারি সেজন্য এটা নিয়ে একটা পক্ষ নোংরামি শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানের আরেক আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার পরিচালক কেএসকে হূদয় বলেন, কোনো একটি অনুষ্ঠান অরগানাইজ করার সময় বিভিন্ন কোম্পানির কাছে স্পন্সরের প্রপোজাল দেওয়ার রীতি নতুন নয়। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। স্পন্সর নেওয়া যদি চাঁদাবাজি হয়, তাহলে আমি বলব, যুগ যুগ ধরে এই চাঁদাবাজি চলছে। সিটি করপোরেশন শুধু আমাদেরকে না, সব ভালো কাজেই স্পন্সর করে। কিছু দিন আগে একটা সংগঠনের বইমেলায় স্পন্সর করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের কনফারেন্সে করছে। তাই আমাদের প্রোগ্রামের জন্য এটা ব্যতিক্রম কিছু নয়। আমরা প্রপোজালে কোথায় কত টাকা খরচ হবে, সবকিছু উল্লেখ করে দিয়েছি। পুরো প্রোগ্রাম সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছি।
সম্মতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমি প্রথমেই বলে দিয়েছি এই আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অর্থ সহায়তা করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ তোমাদের উদ্যোগে করতে হবে। তখন সে আমায় বলে অর্থ বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করে দিতে। আমি ক্যাম্পাসের অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য এর আগেও সুপারিশ করেছি। এটাও সেরকমই একটি ছিল।