সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৫ অপরাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক
সন্তান মহান আল্লাহর অশেষ নেয়ামত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে যত নেয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে দামি নেয়ামত সন্তান। সন্তান দুনিয়াতে আসার মাধ্যম হলো বাবা-মা। তাই সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের দোয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি।
সন্তান দান করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘ধন, সম্পদ ও সন্তানসন্ততি পার্থিব জীবনের অলংকার।’ (সুরা: কাহাফ ৪৬)
সন্তানের জন্য দোয়া
হযরত ইবরাহিম আ. যখন প্রাণপ্রিয় সন্তান ও স্ত্রীকে জনমানবহীন মরুভূমি মক্কার সাফা-মারওয়া পাহাড়ের উপত্যকায় রেখে যান; তখন তাদের জন্য কল্যাণের দোয়া করেছিলেন। দোয়াটি মহান আল্লাহ কবুল করেন এবং পছন্দ করেন। কোরআনুল কারিমে সে দোয়াটি পুনরায় উল্লেখ করে দুনিয়ার মানুষকে তাদের সন্তানদের জন্য দোয়া করতে উদ্বুদ্ধ করেন। যাতে মানুষ সন্তানদের জন্য এভাবে দোয়া করেন।
رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ উচ্চারণ: রাব্বানা লিয়ুকিমুস সালাতা ফাঝআল আফইদাতাম মিনান নাসি তাহওয়ি ইলাইহিম ওয়ারযুক্হুম মিনাস সামারাতি লাআল্লাহুম ইয়াশকুরুন। (সুরা ইবরাহিম: আয়াত ৩৭)
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! তারা (সন্তান-সন্তুতি) যাতে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। কাজেই তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও। আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর; যাতে তারা (আল্লাহ তাআলার) শুকরিয়া আদায় করতে পারে।’
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ উচ্চারণ: রব্বানা আসকানতু মিন যুররিয়াতি বিয়াদিন গাইরা যি যারয়িন ইনদা বায়তিকাল মুহাররাম, রাব্বানা লিয়ুকিমুস সালাতা ফাঝআল আফইদাতাম মিনান নাসি তাহওয়ি ইলাইহিম ওয়ারযুক্হুম মিনাস সামারাতি লাআল্লাহুম ইয়াশকুরুন।
অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে; হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্য যে তারা যেন নামাজ কায়েম করে। অতএব কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দিন এবং ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকা দান করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সুরা: ইবরাহিম ৩৭)
নেক সন্তান লাভের দোয়া
আদর্শ, সৎ-নিষ্ঠাবান ও উত্তম সন্তানের প্রত্যাশা সবার থাকে। তাই মা-বাবারও উচিত এমন সন্তানের জন্য দোয়া করা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ উচ্চারণ: রব্বি হাবলি মিনাস সলিলিহিন। অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নেককার সন্তান দিন। (সুরা: সফফাত ১০০)
মহানবী সা. বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম ১৬৩১)।
সন্তানকে আদব শিক্ষা দেয়া
মা-বাবার অন্যতম কর্তব্য হলো সন্তানকে আদব শিক্ষা দেয়া। রসুলুল্লাহ সা. বলেন, তোমরা নিজেদের ও পরিবার পরিজনদের আল্লাহ ভীতির ব্যাপারে উপদেশ দাও এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। (বুখারি ২৮১)
সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রসুলুল্লাহ সা. এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো।’ (বুখারি ২৫৮৭)
শিষ্টাচারের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। হযরত উমর রা. জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘তোমার সন্তানকে আদব শিক্ষা দাও। কারণ তুমি তোমার সন্তানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে যে, তুমি তাকে কী আদব শিখিয়েছ, তুমি তাকে কী শিক্ষাদান করেছ? (বায়হাকি ৪৮৭৭)
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত
একবার মু‘আবিয়া ইবনে জাহিমাহ আস-সুলামি রসুলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল সা.! আমি যুদ্ধে যেতে চাই। আর এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কামনা করছি। উত্তরে নবীজি সা. বলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবীজি সা. বললেন, তাহলে তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা (তোমার) জান্নাত তার দুপায়ের নিচে (নাসাঈ ৩১০৪)।
মানবতার ধর্ম ইসলাম মাকে দিয়েছে বর্ণনাতীত মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামের দৃষ্টিতে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিনগুণ বেশি।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, এক ব্যক্তি রসুল সা.-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রসুল সা.! মানুষের মাঝে আমার কাছ থেকে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার? নবী সা. বলেন, তোমার মায়ের। লোকটি পুনরায় জানতে চাইলেন, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি পুনরায় জানতে চাইলেন, তার পর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবারও জানতে চাইলেন, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার পিতার। (বুখারি ও মুসলিম)