বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

২ মাদরাসাশিক্ষককে পড়তে হবে মুক্তিযুদ্ধের বই, লাগাতে হবে গাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই মাদরাসাশিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা তিনটি এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন দুটি বই পড়ার শর্তে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে কেকের পরিবর্তে পাউরুটি কাটার দণ্ড হিসেবে তাদের এই শাস্তি দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিতরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বৈরতলা দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম ও শিক্ষক গোলাম কবির।

এই মামলায় আসামি ছিলেন একই মাদরাসার শিক্ষক আজমল হক, হামিদুর রহমান, কুতুবুল আলম, মহসীন রেজা, মনিরুল ইসলাম ওরফে মান্নান, আজিজুর রহমান, শীষ মোহাম্মদ আলী ও মোস্তাক আহমেদ।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত। রায় ঘোষণাকালে আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২০২১ সালের ১৫ মার্চ মাদরাসা সুপার আব্দুল সালাম শিক্ষক ও সহকর্মীদের নিয়ে কেকের পরিবর্তে ১০ টাকা মূল্যের পাউরুটি কাটেন। পরে তিনি তা শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মুখে তুলে দেন।

ওই সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় সুপার বলেন, ‘ল্যাও, থুবড়া খাও।’ মাদরাসাশিক্ষক গোলাম কবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেই ঘটনার লাইভ দেন। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ১৭ মার্চ গ্রেফতার হন এই দুজন।

পরে মাদরাসা সুপারসহ ১১ জনে নামে গোমস্তাপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলা করেন তৎকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিটমাট হয়ে যায়।

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মামলার চার্জ গঠন হয়।

এই মামলায় সাতজনের সাক্ষ্য নেন আদালত। আপস হয়ে যাওয়ায় সাক্ষীরা দ্বিধাবিভক্ত সাক্ষ্য দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইসমত আরা বেগম বলেন, দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এই দুই আসামির এক বছরের করে সশ্রম কারাদণ্ডসহ এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।

অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। কিন্তু মাদরাসাটির শিক্ষাব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় আদালত তাদের পাঁচটি শর্তে প্রবেশন দেন।
 
আদালতের নির্দেশনায় আছে, তিন মাস পরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা তাদের প্রবেশন রিপোর্ট দাখিল করবেন। এই রিপোর্ট সন্তোষজনক হলে এই দণ্ড তাদের চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনো রকম অযোগ্যতা হবে না।

তবে প্রবেশন শর্ত ভাঙলে এই আদেশ বাতিল হবে।

এই এক বছরে আসামিদের জাতির জনকের নিজ হাতে লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এবং জাহানারা ইমাম রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’ বইগুলো পড়বেন। প্রত্যেকেই ১০টি করে বনজ ও ১০টি করে ফলদ গাছ রোপণ করবেন।

প্রবেশনকালীন আসামিদের কোনোরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়া যাবে না।

একই ধরনের অপরাধ করাও যাবে না। এ ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম সম্পর্কে নিজেরা পড়বেন, জানবেন, সহকর্মী শিক্ষক ও নিজ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সেই গৌরবের ইতিহাস জানাবেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।