বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

করোনা কতোটা বদলে দেবে আগামীর পৃথিবী

মতামত ডেস্কঃ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অগ্রগতির বর্তমান সময়েও অদৃশ্য মারণ জীবাণুর কারণে অত্যন্ত সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব। ডেল্টা করোনাভাইরাসের ভয়ে এই মুহূর্তে লকডাউনে বিশ্বের প্রায় অর্ধেকের বেশি লোক ঘরে সময় কাটাচ্ছেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এত বেশিসংখ্যক মানুষ একই সময়ে, একটানা, এত দীর্ঘকাল ঘরে বন্দি থাকেনি। ফলে পৃথিবী আর আগের মতো নেই। বদলে গেছে। দ্রুতগতিতে পাল্টে যাচ্ছে মানুষের প্রতিদিনের জীবন।


এখন প্রশ্ন- আমরা যেভাবে চলছিলাম সেভাবে আর চলা যাবে কি? সবকিছু কি আগের মতো থাকবে? এই ভয়াবহ সময় কাটিয়ে আমরা কি ফিরবো আগের ছন্দে? নাকি পুরোদস্তুর বদলে যাবো? করোনা ভবিষ্যৎ পৃথিবী পাল্টে দেবে নাতো? কেমন হবে সেই পৃথিবী?


এসব প্রশ্নে বিজ্ঞানী গবেষকদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার রেখা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত এই পরিবর্তন মেনে নিতে হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের বেঁচে থাকা শিখতে হবে।’ একবাক্যে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন, করোনা পরবর্তী সময় কখনো আর আগের মতো হবে না। আমাদের সামাজিকতা, পারিপার্শ্বিকতা, আচরণ, ব্যবহার, সম্পর্কের ধরন বদলে যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্র বদলে যাবে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মনে যে ভয় সেঁটে গেছে, তা কাটাতে দশ থেকে বিশ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। মানুষে-মানুষে সংস্পর্শ কমে যাবে।


করোনাকালে শারীরিক উপস্থিতির বদলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনে আরও বেশি প্রয়োজন বলে অনুভূত হচ্ছে। একযুগ আগে শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল রূপান্তর করায় করোনা দুর্যোগে নানান ঝক্কি মোকাবিলার কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম লকডাউনে ঘরে বসে অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। ডিজিটাল আউটসোর্সিং পেশায় এই প্রজন্ম নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। এসবই ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল। যা সত্যিই গৌরবের।


এ কথাও ঠিক, আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চাকরির বাজারে ভাগ বসাবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত নতুন নতুন ডিজিটাল অ্যাপস সমাধান করবে মানুষের প্রাত্যহিক যাবতীয় দরকারি কাজ। সময় বাঁচানোর জন্য মানুষ সামনা-সামনি দেখা-সাক্ষাত এড়িয়ে যাওয়ার বিকল্প অনলাইন, ফোনকল, জুম, স্কাইপে কিংবা চ্যাট বেশি বেছে নেবে। অফিসের কাজে প্রয়োজন হবে আরও বেশি অনলাইন দক্ষতার। করোনার পরে হয়তো অফিসে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেবার প্রবণতা কমে আসবে। ঘরে বসে কাজ করাকে উৎসাহিত করা গেলে জ্যাম, যাতায়াত খাতে সময় ও অর্থ ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন আসবে। ধীরে ধীরে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্টাফকে রোস্টারে কাজ করিয়ে ছোট অফিস ভাড়া নিয়ে আর্থিক সাশ্রয়ের প্রচলন শুরু হবে।


দেশে দেশে ইতোমধ্যে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কাজে রোবটের ব্যবহার বেড়ে গেছে। মানবশ্রমিকের প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতে বসেছে। রোবটের কাছে হেরে যাচ্ছে মানুষ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শ্রমবাজারের ৫২ ভাগই চলে যাবে রোবট যন্ত্রের দখলে। গবেষকরা বলছেন, আগামী দিনে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে। শারীরিক নৈকট্যের মাধ্যমে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়া রোধে ভোটারকে আর ভোটকেন্দ্রে স্বশরীরে হাজির হয়ে ভোট দিতে হবে না। ভোটের প্রচার, এমনকি ভোটের কাজ সম্পাদনের কাজ করবে অনলাইন অ্যাপস। ভোট হবে ঘরে থেকে স্মার্টফোনে। এতে হানাহানি কমবে নিশ্চিত। সাশ্রয় হবে বাহুল্য খরচ। অনলাইন যোগাযোগে খরচ কমবে, গতি বাড়বে। এসবই নাগরিকে সুরক্ষায়, দেশের প্রয়োজনে মহামারি মোকাবিলার আগামী দিনের বিজ্ঞান সম্মত পদক্ষেপ বৈকি!


চীন কি শুধু লকডাউন করে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফল হয়েছে? জি না। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনা নির্মূল করে দ্রুত চমক সৃষ্টি করেছে চীন। নাগরিকের আঙুলের তাপমাত্রা কত? ত্বকের নিচে রক্তের চাপ কত? অ্যাপের মাধ্যমে সব মানুষের স্মার্টফোন খুব নিবিড়ভাবে মনিটর করে চীন। ফেস-রিকগনাইজিং বা চেহারা চিনতে পারে এরকম লাখ লাখ ক্যামেরা দিয়ে নজর রাখা হয় মানুষের ওপর। দ্রুত ভাইরাসের বাহক শনাক্তকরণই নয়, সেই বাহকের চলাফেরা ট্র্যাক থেকে শুরু করে কাদের সংস্পর্শে ভাইরাস বাহক ছিল তাও বের করে ফেলা হয় অসম্ভব দ্রুতগতিতে। ফলে সরকার খুব দ্রুত শনাক্ত করতে পারে- কে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত, কার সাহায্য প্রয়োজন, কে আক্রান্ত নয়।


চীনের দেখাদেখি ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশের সরকার নতুন সারভেইল্যান্স টুলস ব্যবহার করছে। আগামী দিনে জনকল্যাণে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে দেশে দেশে সরকারগুলোর জানা থাকা দরকার হবে আপনার শারীরিক অবস্থার সম্পূর্ণ তথ্য। সংক্রামক রোগ থেকে জনগণকে বাঁচাতে নিজ নিজ শরীরের তাপমাত্রা মাপা, পরীক্ষা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সরকারকে বাধ্যতামূলক জানাতে হবে।


ডেল্টা করোনাভাইরাস রুখতে আগামী দিনে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষের শরীরের চামড়ার নিচে বায়োমেট্রিক মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে ট্র্যাকিং করা ছাড়া উপায় থাকবে না। পুরো জনগোষ্ঠীর ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারিতে কাজে লাগবে এই মাইক্রোচিপ। যা প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা মানুষের হার্টবিট আর শরীরের তাপমাত্রা মনিটর করবে। দেশের সবখানে ছড়িয়ে থাকা ব্লুটুথ, ওয়াইফাই সেন্সর আর শক্তিশালী অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কাজটা হবে খুব সহজে। এভাবে সংগৃহীত ডাটা চলে যাবে সরকারের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যভাণ্ডারে। বিশ্লেষণ হবে বিশেষ অ্যালগরিদম দিয়ে। ব্যক্তি মানুষ নিজে জানার আগে সরকার জেনে যাবে কে সুস্থ আর কে অসুস্থ। ফলে সংক্রামক ব্যাধি ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটা দমন করা সহজ হবে।


করোনা রোধে এমনই এক বায়োমেট্রিক মাইক্রোচিপ সম্প্রতি তৈরি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনের তত্বাবধানে জীবাণু অস্ত্র নিয়ে কাজ করা সংক্রমণ রোগের বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডা. ম্যাট হেপবার্ন। এই মাইক্রোচিপ শরীরে প্রবেশ করালে করোনাভাইরাস শনাক্ত ও প্রতিরোধ করে। মাইক্রোচিপটি জেলির মতো নরম। এটি চামড়ার টিস্যুতে লাগিয়ে টেস্ট করা হয়েছে। করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি এটির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রটি সংকেতের মাধ্যমে জানান দেয় শরীরে জীবাণুর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। সংকেত দেয়া মানে আপনি করোনা সংক্রমিত হতে যাচ্ছেন। এই বায়োচিপে ব্যবহৃত ন্যানো মেশিন শরীরে বসে রক্ত পরিবহনের সময় রক্তে থাকা করোনার জীবাণু, যন্ত্রের ন্যানো ফিল্টারে তিন থেকে পাঁচ মিনিটে বিষক্রিয়া ধ্বংস করে। তারপর রক্ত পরিশুদ্ধ করে শরীরে ফেরত পাঠায়। এছাড়া মাইক্রোচিপে আর কোনো গোপনীয়তা নেই। শুধু করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এটি তৈরি করা হয়েছে। এটি এমন এক সময়ে তৈরি করা হয়েছে যখন গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চলছে যে, মানুষের শরীরের মধ্যে মাইক্রোচিপ ঢোকানোর জন্য ভ্যাকসিন বানিয়েছেন বিল গেটস্।


করোনা থেকে বাঁচতে নাগরিকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এমন বায়োচিপ বা ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার সমাজতান্ত্রিক দেশে কোনো কথা না হলেও গণতান্ত্রিক দেশসমূহে প্রশ্নবিদ্ধ হবে- ‘যে প্রযুক্তি কাশি শনাক্ত করতে পারে, সেটি নিশ্চয় আমাদের হাসিও শনাক্ত করবে।’ বেলাশেষে এই প্রযুক্তি করোনা জীবাণুযুদ্ধে বেশি উপকারী, সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী হিসেবে প্রমাণিত হবে। মাইক্রোচিপের মাধ্যমে সরকারের ডিজিটাল স্বাস্থ্য নজরদারীর কারণে মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে চোখ, কান, হৃদপিণ্ড, কিডনী, মস্তিষ্কের অগ্রিম খবরাখবর পাওয়া যাবে। ফলে সুচিকিৎসাও সম্ভব হবে। সংক্রমণ চিহ্নিত করে ও নিরাপত্তা সেবাপ্রাপ্তির সুরক্ষা মেলে এমন মাইক্রোচিপ বা ডিজিটাল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা করোনাযুদ্ধে বাংলাদেশে আগামী দিনে জরুরি ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে- সেকথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।


লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।