বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্কঃ
এই ছবিটা সাদা-কালো করতে হাত কাঁপছিল। যে মানুষটা স্কিলের ঝলকানিতে ফুটবলকে রঙিন ও বর্ণময় করে তুলেছিলেন, সেই মানুষটার বিদায়বেলায় সাদা-কালো ছবিটা কি সত্যিই খাপ খাবে? সঠিক উত্তরটা জানা নেই। হয়ত কোনওদিন উত্তরটাও মিলবে না। আর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে কী-বা হবে, কারণ মানুষটাই তো আর নেই।
দীর্ঘ অসুস্থতার পর প্রয়াত হয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে। বয়স হয়েছিল ৮২। ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবলের সম্রাট। শুক্রবার মধ্যরাতে ইনস্টাগ্রামে পেলের মেয়ে লেখেন, ‘আমরা যা কিছু হয়েছি, সেটা তোমার জন্য। তোমায় অপরিসীম ভালোবাসি। শান্তিতে ঘুমাও।’
পেলের জন্ম
১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ট্রেস কোরাসোয়েসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পেলে। যে ট্রেস কোরাসোয়েসের অর্থ হল ‘তিনটি হৃদয়’। বাবার থেকে রক্তে ফুটবল এসেছিল পেলের। তার বাবা পেশাদারি ফুটবল লিগে খেলতেন। কিন্তু হাঁটুর চোটের জন্য ক্যারিয়ারে ইতি পড়েছিল।
পেলের নামকরণ
কীভাবে ট্রেস কোরাসোয়েসের ছোট্টো ছেলেটার নাম পেলে হল, তা নিয়ে প্রচুর গল্প আছে। তবে পেলে নিজে জানিয়েছিলেন, ছেলেবেলায় পাড়ায় প্রায়শই গোলকিপার হিসেবে খেলতেন। সেইসময় স্থানীয় খেলোয়াড় ‘বাইল’-এর সঙ্গে তার তুলনা করা হতো। সেই নামই ক্রমশ পালটে-পালটে পেলে হয়েছিল। যে যেটাই হোক না, গোলকিপার নয়, বরং ফরোয়ার্ড হিসেবে বিশ্ব ফুটবল কাঁপিয়েছিলেন পেলে।
পেলের বয়স যখন মাত্র ১৫, তখন ব্রাজিলের ক্লাব স্যান্টোসে যোগ দিয়েছিলেন। যে ক্লাবে ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন। জিতেছিলেন সব ট্রফি। তারইমধ্যে স্যান্টোসে যোগ দেয়ার পেলের প্রতিভা জাতীয় দলের নজরে পড়েছিল। মাত্র ১৭ বছরেই ব্রাজিলের জার্সিতে ফুটবল বিশ্বকাপে খেলেছিলেন।
বয়সের কারণে দলের এক মনোবিদ তাকে না খেলানোর কথা বলেছিলেন। পেলের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘স্পষ্টতই শিশু ও’। কিন্তু সেই ‘শিশু’-ই যে কী করতে পারেন, তা সুইডেনের মাটিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
পেলের রেকর্ড
১. কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ফুটবল সম্রাট। সুইডেনকে ফাইনালে ৫-২ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। দুটি গোল করেছিলেন স্বয়ং পেলে। সেইসময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৯ দিন।
২. তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে – ১৯৫৮ সাল, ১৯৬২ সাল এবং ১৯৭০ সাল। বিশ্বের আর কোনও খেলোয়াড়ের এমন রেকর্ড নেই। ১৯৫৮ সাল এবং ১৯৭০ সালের ফাইনালে গোলও করেছিলেন পেলে।
৩. রেক.স্পোর্টস.সকার স্ট্যাটিস্টিক ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রাজিলের জার্সিতে মোট ৯২টি ম্যাচে ৭৭টি গোল করেছিলেন পেলে। ফ্রেন্ডলিতে ৩৪টি, বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ছয়টি, বিশ্বকাপে ১২টি, কোপা আমেরিকায় আটটি এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টে ১৭টি গোল করেছিলেন।
৪. ফিফার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ১,৩৬৬টি ম্যাচে ১,২৮১টি গোল করেছিলেন পেলে। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে গোলের হার ছিল ০.৯৪। তবে কয়েকটি গোল এসেছিল মিলিটারি সার্ভিস বা ফ্রেন্ডলিতেও। অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে পেলের গোলের সংখ্যা ছিল ৭৫৭ – ৮১২টি ম্যাচে)।
৫. বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার রেকর্ডও তৈরি করেছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিপক্ষে গোল করেছিলেন। সেইসময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন। ওই গোলের সুবাদেই ম্যাচ জিতেছিল ব্রাজিল।
৬. বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিকেরও নজির গড়েছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ‘ব্ল্যাক পার্ল’। সেইসময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৪ দিন।
কাতার বিশ্বকাপের সময় যখন পেলে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তার আরোগ্য কামনা করতে থাকেন ফুটবল তারকা, সমর্থকরা। তারইমধ্যে নজর কেড়েছিল কাতারের লুসেল স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের সমর্থকদের আনা ফুটবল সম্রাটের একটি ব্যানার। ওই ব্যানারে দেখা গিয়েছিল যে গালের পাশে ধরে ফুটবল ধরে আছেন পেলে। মুখে পরিশ্রান্তির হাসি। ব্যানারের ঠিক সামনে বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা ধরেছিলেন এক ব্রাজিলিয়ান।
ওই ছবিটাই একলপ্তে ফুটবল সম্রাট পেলের সাম্রাজ্য। যে সাম্রাজ্যের জাদুকর, সম্রাট, রাজা, বাদশা ছিলেন তিনি। আজ পার্থিব শরীর না থাকলেও সাম্রাজ্য থেকে যাবে অমর।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস