শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

সাড়া ফেলছে ৪৫০ টাকা কেজি কোরবানির গরু বিক্রি

রংপুর প্রতিনিধিঃ

দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওজন মেপে কোরবানির পশুর বেচাকেনা। হাটের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে এবং স্টেরয়েড মুক্ত পশু কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন ওজনে বিক্রি হচ্ছে এমন গরুর ফার্মে।

রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জের দেওয়ানটুলি এলাকায় জমজম ক্যাটল ফার্ম নামে একটি গরুর খামারে ওজনে বেচাকেনা হচ্ছে কোরবানির পশু। ৪৫০ টাকা কেজি দরে খামারেই বিক্রি করা হচ্ছে গরু। গত দুই বছর ধরে এই পদ্ধতিতে গরু বিক্রি হচ্ছে এই খামারে।

জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই খামারে আগ্রহী ক্রেতারা আসছেন এবং গরু দেখছেন। পছন্দ হলে ওজন স্কেলে উঠিয়ে পরিমাণ দেখে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন। ঈদুল আজহার এক দিন বা দুই দিন আগে গরু নিয়ে যাবেন। আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য ১২০টি গুরু প্রস্তুত করা হয়েছে এই খামারে। ওজনে গরু বেচাকেনায় ক্রেতাদের বেশ সাড়া পড়েছে।

বর্তমানে ক্রেতারা ঝক্কি-ঝামেলা মুক্ত এবং ফ্রেশ গরু কিনতে ছুটছেন এমন খামারে। তবে এভাবে গরু বিক্রি করে ক্রেতা-বিক্রেতা লাভবান হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

ক্রেতারা বলছেন, ওজন স্কেলে গরু বেচাকেনায় সুবিধা অনেক। ওজন স্কেলে গরু মেপে বেচাকেনার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ঠকে যাওয়ার চিন্তা নেই। বাজেট অনুযায়ী সুস্থ-সবল পশু কিনতে পারছেন তারা।

জমজম ক্যাটল ফার্মে গরু কিনতে আসা রাজু আহমেদ বলেন, বেশ কিছু হাটে ঘুরেছি। এখনও পছন্দসই গরু কিনতে পারিনি। এ কারণে খামারে এসেছি। ওজনে মেপে পছন্দমতো গরু কেনার পদ্ধতিটি আমার ভালো লেগেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার উদ্দেশ্য এবং নিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ সবকিছুই জানেন। কোরবানির উদ্দেশ্য থেকে গরু কিনতে এসেছি। যদি পছন্দ হয় কিনব ইনশাআল্লাহ।

কোরবানির গরু ওজন স্কেলে মেপে বেচাকেনা নিয়ে নানামত থাকলেও এমন পদ্ধতিতে কোরবানির গরুর কেনাবেচায় নানা প্রতারণাসহ ভোগান্তি লাঘব হয় বলে জানান সচেতনরা।

সমাজকর্মী ও সংগঠক এস এম পিয়াল বলেন, কোরবানির পশু কেনার মধ্যে হারজিতের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু মনের প্রশান্তি গুরুত্ব বহন করে। হাটে গিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। বিশেষ করে দালালের খপ্পরে পড়ার বিড়ম্বনা তো আছেই। সঙ্গে গরুর আনুমানিক ওজন নিয়ে বিক্রেতারা লুকোচুরি করে থাকেন। এতে কোরবানির পর প্রত্যাশানুযায়ী মাংস কম হলে অনেকেই কষ্ট পান।

তিনি আরও বলেন, খামারে দেখেশুনে সঠিক প্রক্রিয়ায় গরু কিনতে পারায় প্রতারণা ও হয়রানির সুযোগ নেই। এখানে ওজনে যা হচ্ছে, সেই হিসাবে দাম পড়বে। গো-খাদ্য নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। একইসঙ্গে পরিবহন জটিলতাও নেই। সবমিলিয়ে এটি একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে হচ্ছে।

খামারিরা জানান, হাট থেকে গরু কিনতে গেলে ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, দূরদূরান্ত থেকে আসা গরুকে স্টেরয়েড বা মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে কিনা এটা গরু দেখে বোঝার উপায় নেই। তাই ক্রেতারা দেখে-শুনে গরু নিতে আসছেন খামারে।

এই পদ্ধতিতে গরু কিনে কোরবানি করা যাবে কিনা এ নিয়ে অনেকের মনে নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে। যদিও খামার মালিকের দাবি তারা ইসলামী শরিয়াহ অনুসরণ করে গরু বিক্রি করছেন।

জমজম ক্যাটল ফার্মের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মতিন আজিজ বলেন, খামারে থাকা সব গরু শাহিওয়াল জাতের। এসবের জন্য ফিড ও নিয়মিত দেশি খাবারের পাশাপাশি পরিচর্যার কোনো কমতি নেই। একেকটার ওজন ও আকৃতি একেক রকম। এই গরুগুলো লালনপালন করে ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ আসছেন, গরু দেখে পছন্দ হলে তারপর কিনছেন। এসব গরু দেশি ও প্রকৃতি নির্ভর খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। এ কারণে দেখতেও অনেক স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী। প্রতিদিন কেউ না কেউ আসছেন।

আব্দুল মতিন আজিজ জানান, ইতোমধ্যে যেসব গরু বিক্রি হয়েছে, সেগুলো তার খামারেই রয়েছে। এসব গরুর খাওয়া, দেখাশোনা এবং ঈদের আগে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সব খরচ খামার থেকে ব্যয় করা হবে। কোনো গরুকে ইনজেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা হয়নি। যারা গরু কিনেছেন তাদের গরুর শরীরে একটি নম্বর লেখা রয়েছে, যাতে সহজেই চেনা যায়। ইসলামী শরিয়ত সম্মত বিধি মেনে ওজনে মেপে গরু বিক্রি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির জন্য রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রায় ১৪ লাখ পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। ভালো দামের আশায় কোরবানির বাজার ধরার জন্য এসব পশু যত্ন সহকারে লালন-পালন করছেন তারা। ভারত থেকে গরু না এলেও এ অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে পশু অন্য এলাকায় সরবরাহ করা যাবে।

রংপুর প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এ বিভাগের আট জেলায় দেড় লাখের বেশি খামারি প্রায় পাঁচ লাখ গরু বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এছাড়া দুই লাখ গৃহস্থ প্রায় ৯ লাখ গরু ও খাসি বাজারে বিক্রি করার জন্য তৈরি করেছেন। এর মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৩ হাজার খামারে দুই লাখের বেশি গরু রয়েছে।

গত বছর কোরবানি উপলক্ষ্যে ১৩ লাখ গরু-খাসি প্রস্তুত থাকলেও চাহিদা মিটিয়ে আড়াই লাখের বেশি পশু ছিল। এবার ১৩ লাখ ৭০ হাজার গরু-খাসি কোরবানির উপযুক্ত রয়েছে। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও প্রায় তিন লাখের মতো পশু থাকবে বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল হাই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।