বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

বাউন্ডারি ওয়াল ও আ’লীগ নেতার মামলায় আটকে আছে কুষ্টিয়া শহর ফোর লেন সড়কের কাজ!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ

পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা জর্জের বাস ভবনের বাউন্ডারি ওয়ালে আটকে গেছে কুষ্টিয়া শহরের ফোর লেন সড়ক নির্মানের কাজ। পাশাপাশি এক আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের দায়ের করার মামলাও জট বাড়িয়েছে।ফোর লেন সড়কের পাশাপাশি উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সৌন্দর্য্য বন্ধন করার কাজও শেষ করতে পারছে না সড়ক বিভাগ। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ কাজটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২১ সালে শুরু হওয়া কাজটির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদে বাড়ার পাশাপাশি ভোগান্তি বেড়েছে সাধারন মানুষের। মুল শহরের মধ্যে কাজ বন্ধ থাকায় আশেপাশের বাসিন্দাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শহরকে যানজট মুক্ত করার পাশাপাশি পথচারিদের হাঁটার জন্য শহরের সড়কটি দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নতিকরনের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। সড়কের পাশাপাশি দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত করা হচ্ছে। একই সাথে ডিভাইডারের মাঝে বৃক্ষ লাগিয়ে সৌন্দর্য্যবন্ধন করার প্রকল্প রয়েছে

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে,‘ পৌর এলাকার বটতৈল থেকে শহরের মুল পয়েন্ট মজমপুর গেট, মজমপুর গেট থেকে ত্রিমনোহী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নতিকরণ কাজের জন্য ২০২১ সালে দরপত্র আহবান করা হয়। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বটতৈল থেকে মজমপুর গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার কাজের কার্যাদেশ পান জহরুল লিমিটেড আর মজমপুর থেকে ত্রিমহোনী পর্যন্ত কাজ পান স্পেকটা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এ কাজের জন্য ব্যায় ধরা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা।

গত বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়ানো হয় ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডিসেম্বরে কাজ শেষ না হওয়ায় ফের চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ। সড়ক ও জনপথের হিসাব মতে এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দুটি স্থাপনার বাউন্ডারি ওয়াল ও একটি মামলায় আটকে গেছে শতকোটি টাকা প্রকল্পের এ কাজটি। মজুমপুর গেট থেকে তিমোহনী অংশে পড়েছে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা জজের বাড়ি। এখানে সীমানা প্রাচীর না ভাঙ্গায় আটকে আছে কাজ। দুটি সীমানা প্রাচীরের কারনে কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে কয়েক বছর ধরে।একই সাথে মঙ্গলবাড়িয়া গড়ই নদীর পাশে কয়েকটি বহুতল ভবন সড়কের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে।

এসব কারনে নকশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না সড়ক বিভাগ। প্রভাবশালীরা সড়ক ও জনপথকে ম্যানেজ করে তাদের স্থাপনা ঠিক রাখছে। এসব কারনে ড্রেন ও সড়কের কাজে জটিলতা বাড়ছে। মজমপুর এলাকার বাসিন্দা ফয়জুল করিম শেখ বলেন,‘ কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। প্রভাবশালীদের বাড়ি রক্ষা করতে কাজ করছে সড়ক বিভাগ।’ এদিকে পুলিশ লাইনের বাউন্ডারি ওয়ালের জমি না পাওয়ায় কাজ করতে পারছে ঠিকাদার। জমিটির মালিকানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের। আন্ত:মন্ত্রনালয়ের সভায় বিষয়টি সমাধানের পথ খোঁজ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান,‘ পুর্ত মন্ত্রনালয়ের সাথে স্বারষ্ট মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের সভা হয়েছে। সেখানে ভুমি মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন। সমাধানের দিকে যাচ্ছে। একই সাথে জেলা জজের বাড়ির সীমানা প্রচীর ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ সেটা হবে কেউ বলতে পারছে না। এদিকে বটতৈল থেকে মজমপুর গেট এলাকার কাজে বাগড়া দিয়েছে একটি মামলা। বিসিক শিল্পনগরীর সামনে ১ কিঃ মিঃ সড়ক’র জমি মালিকানা দাবী করে আদালতে মামলা করেছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউল হকের পরিবার। তার ভাই মাহাবুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলা ঠুকেছেন। জমিটির মালিকানা বলে তারা দাবি করছে। মাহাবুল আলম বাদি হলেও মুলত কলকাঠি নাড়ছে আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল হক।

সরকারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেই মামলা করেছেন তারা। আর এ জমি তাদের নয় বলে দাবি সড়ক বিভাগের। সড়ক বিভাগ বলছে, জায়গাটি জেলা পরিষদের। আর রেজাউল হকের দাবি তাদের ক্রয়করা সম্পত্তি। যার কারনে তারা মামলা করেছেন। মামলার কারনে ৫ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করা যায়নি। ড্রেনের কাজও এ অংশে নকশা অনুযায়ী করা যায়নি বলে জানা গেছে। সড়ক বিভাগের গাফিলতির ফলে মামলা জটে পড়েছে এ কাজটি। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও তার পরিবারকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা মামলা তুলে না নেওয়ায় সমাধান হচ্ছে না। ড্রেনগুলো প্রভাবশালীদের চাপে পশ্চিম দিকে চেপে দেয়া হয়েছে অভিযোগ এলাকাবাসীর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউল হক বলেন,‘ উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য বসা হয়েছিল। সমাধান হয়ে যেতে পারে।’ এদিকে বারবার সময় বাড়ায় কাজের গতি কমে যাচ্ছে।

মজমপুর গেটে সড়ক ঘেঁষে রেল লাইন চলে গেছে। এখানেও দোকান থাকায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। যানবাহন চালকসহ সাধারন মানুষকে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ড্রেনেজ কাজ শেষ না হওয়ায় বৃষ্টি হলে অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে যাচ্ছে বলে জানান আসলাম হোসেন নামের একজন বাসিন্দা। এতসব জটিলতা কাটিয়ে কবে কাজ শেষ হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু। তিনি বলেন,‘ কাজ শুরুর আগে এসব জটিলতা নিরসন না করায় এখন সমস্যা বাড়ছে। এতে সরকারের কাজ যথাসময়ে শেষ না হাওয়ায় জনভোগান্তি তৈরি হচ্ছে। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন,‘ সেলিম আজাদ খাঁন বলেন,‘ দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রচীর ও একটি মামলার কারনে ফোর লেন সড়কের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। জমি বুঝে না পাওয়ায় ড্রেনের পাশাপাশি সড়কের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বিষয়গুলো সমাধানের জন্য কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হলে এ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।