বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

সংকটে জর্জরিত আলমডাঙ্গার রেলস্টেশন, নেই সংস্কারের উদ্যোগ

আলমডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ

ভারতবর্ষে রেল যোগাযোগ চালুর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার রেলস্টেশন চালু হয়। দেশের প্রথম দোতলা স্টেশন এটি। ঐতিহ্যবাহী এ রেলস্টেশনের মূলভবন নানা সমস্যায় জর্জরিত। সংস্কার ও সংরক্ষণেরও কোনো উদ্যোগ নেই। ব্রিটিশ আমলের এ স্থাপত্যের শরীরজুড়ে এখন পরগাছাদের বসবাস। 

রেলস্টেশনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সেই সময় ইউরোপ থেকে সৌন্দর্যবর্ধক বহু বিরল প্রজাতির গাছ নিয়ে এসে লাগানো হয়েছিল। এর মধ্যে নানা প্রজাতির ফুলের গাছও ছিল। সেসবের মধ্যেকার একটি বিরল প্রজাতির পাম ও একটি কাঠমল্লিকা ফুলগাছ এখনো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আলমডাঙ্গা স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে কুলির কাজ করা হায়দার আলী বলেন, বয়েস তো অনেক হলো। বহু বছর এখানে কুলির কাজ করি। স্টেশনের মেরামত খুব দরকার। সেই ইংরেজরা কবে করে গেছে।

স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রবীণ আনছার আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এই স্টেশনের দ্বিতল ভবন মূলত ১৭৫৩ সালের পরে তৈরি। তখন ব্রিটিশরা এই ভবনকে এই এলাকার নীল চাষের অফিস হিসেবে ব্যবহার করত। এই স্টেশনের নিচের ভবনে যে কত নীল চাষির রক্ত মিশে আছে, সেটা বলাই বাহুল্য। ১৮৬২ সালের পরে এটা রেলস্টেশন করে ব্রিটিশরা। বর্তমানে এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুব দরকার।

বেশ কয়েক বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ রেলস্টেশনের মূল ভবনের কোনো সংস্কার করা হয়নি। দীর্ঘদিনের অবহেলায় ঐতিহ্যের এ স্মারকের অবয়বজুড়ে জন্মেছে আগাছা। আলমডাঙ্গাবাসী রেললাইনের সংস্কার, স্টেশনের সংস্কার, ঢাকাগামী ট্রেনের বরাদ্দ দেওয়া আসন সংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন ট্রেনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে যেতে বাচ্চা নিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আলমডাঙ্গা স্টেশনটা অনেক পুরোনো। সেই হিসেবে এই স্টেশনের আরও উন্নয়ন খুব দরকার। এই স্টেশনে বসার পরিবেশ ভালো না। ভবনগুলোরও দুর্দশা কর্তৃপক্ষ খেয়াল করে না।

স্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী গীতা পাল বলেন, দোতলা স্টেশনে নামতে খুব কষ্ট হয়। কারণ সিড়ি ঘরটা ভালো নয়। যার কারণে ঘুরে গিয়ে নামতে হয়। ওই দিকটা সংস্কার করা দরকার। স্টেশনের ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটা বাংলাদেশের প্রথম দোতলা স্টেশন। এই স্টেশনের উন্নয়ন দরকার।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের এই স্টেশন অনেক পুরোনো। কিন্তু এই স্টেশনের সংস্কার প্রয়োজন। সিঁড়িতে উঠানামার সমস্যা হয়। এখানে আলোর ব্যবস্থা কম। একই সঙ্গে এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডাও চলে। এটা বন্ধ হোক।

তরুণ কুমার সাহা নামে এক যাত্রী বলেন, এই স্টেশনের মূল সিঁড়ি অনেকটা অকেজো হয়ে রয়েছে। সিঁড়িতে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় রাতে নামতে ভয় করে। আর মাদকসেবীদের কারণে রাতে যাত্রীরা ভয়ে থাকে। এসব সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

নাম প্রকাশ না করে আনন্দধাম এলাকার এক যাত্রী বলেন, মেইন প্লাটফর্মে টয়লেট, যাত্রী আছে। কিন্তু দ্বিতীয় প্লাটফর্মে এগুলো নেই। যার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে এসব সমস্যার সমাধান করুক, এটা আমার চাওয়া।

নিলা কান্তি পাল নামে আরেক যাত্রী বলেন, আমি অনেক বছর ধরে যাতায়াত করছি। এই স্টেশন আগে ভালো ছিল। কিন্তু এখন একদম ভাঙাচোরা। তা ছাড়া দোতলা থেকে নিচতলায় নামতে গিয়ে আমার পা মচকে গেছে। এই স্টেশনের সংস্কার প্রয়োজন।

আলমডাঙ্গার রেল স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আলমডাঙ্গা স্টেশনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে এটা ভাঙার সুযোগ নেই। স্টেশনের অনেক সংস্কার হয়েছে ও হচ্ছে। তবে বর্তমানে ওপারের অর্থাৎ ২ নম্বর প্লাটফর্মে যাত্রী স্থাপনসহ টুকিটাকি বেশ সংস্কার প্রয়োজন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আগেই জানিয়েছি সমস্যাগুলো। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে আসেন এবং নিয়মিত খোঁজ নেন।

তিনি আরও বলেন, প্রায় সব ট্রেন এখানে থামলেও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন থামে না। এটার স্টপেজ দিলে আমরা সরকারকে বেশি রাজস্ব দিতে পারতাম। একই সঙ্গে এলাকাবাসী উপকৃত হতো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।