বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

যে কারণে হেরেছেন তিনবারের এমপি ইনু

কুষ্টিয়া পোস্ট ডেস্ক:

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তবে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি।

হাসানুল হক ইনুকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট।

হাসানুল হক ইনুর পরাজয়ের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেন না ইনু। উল্টো নির্যাতন, নিপীড়ন, অপমান, অবহেলা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর নির্বাচনের হাওয়া ঘুরে যায়। মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যানকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করেন। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানা কারণে দ্বন্দ্ব প্রকট হয় ইনুর। ফলে এবার বিরোধিতার মুখে পড়ে হেরে যান তিনি।

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হালিম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। গত ১৫ বছরে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছি। সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। গত পাঁচ বছরে ৫ বারও আমার খোঁজ নেননি ইনু। তার সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। আমি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়েছি, সেখানে অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই কারণে মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কামারুল আরেফিনকে নির্বাচনে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ইনুর ১৫ বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের ফসল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়।

তিনি বলেন, উনি (ইনু) শুধুমাত্র নৌকা প্রতীক নিয়ে এসে এমপি হন, পরবর্তীতে জাসদ হয়ে যান। এই কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে। নৌকার বৈঠা মারি আমরা, মিরপুর ও ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আছে। সেটা আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। ইনু নৌকা নিয়ে তিনবার জিতেছেন। এবার প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জাসদের বিরুদ্ধে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কামারুল আরেফিনকে জয়যুক্ত করেছি। মিরপুর ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভোটে ইনু তিনবার এমপি হয়েছেন। এমপি হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভুলে যান। নির্যাতন ও অবহেলা করেন। সেই ক্ষোভে ভেড়ামারা-মিরপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে কামারুলের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে লড়াই করেন। কামারুলের সঙ্গে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম, ভেড়ামার‌া উপ‌জেলা আওয়ামী লী‌গের সভাপ‌তি র‌ফিকুল আলম চুন্নু, সাধারণ সম্পাদক সামিউল ইসলাম সানা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠুর মতো শীর্ষ নেতারা ছিলেন। 

এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

নির্বাচনে পরাজয়ের পর যোগাযোগ করা হলে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আমি ১৫ বছর এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে হাঁটছি-চলছি। আমি আমার সাধ্যমতো এই এলাকার মানুষের পাশে থেকে উন্নয়ন করছি, শান্তির পথ তৈরি করেছি। সবাই খুশি হবে আমি তা মনে করি না। গত ১৫ বছরে ইনু অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ঘুষ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য করিনি। 

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন বলেন, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার মানুষের কল্যাণে এবং শান্তির জন্য আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখব।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ১৯৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত জাসদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন।

ইনুকে চ্যালেঞ্জ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন গত ২৮ নভেম্বর পদত্যাগ করেন।

দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এবং এমপি নির্বাচিত হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।