বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৮:১৩ অপরাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

আরবি লেখা পোশাক পরায় পাকিস্তানে জনতার রোষানলে কিশোরী, হত্যাচেষ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানে আরবি হরফ লেখা পোশাক পরায় এক কিশোরীকে ঘিরে ধরে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে একদল উন্মত্ত জনতা। জনতার অভিযোগ, কোরআনের আয়াত লেখা পোশাক পরে তিনি ধর্ম অবমাননা করেছেন। তবে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই কিশোরী রক্ষা পেয়েছে। রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) লাহোরের জনাকীর্ণ ইচরা বাজারে এই ঘটনা ঘটে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, লাহোরের ইচরা বাজারে আরবি হরফ লেখা একটি জামা পরে গিয়েছিলেন ওই কিশোরী। কিন্তু স্থানীয় ক্রেতা, পথচারী ও অন্যান্যরা ওই কিশোরী পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা জামা পরে ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননা করেছেন অভিযোগ তুলে তার ওপর চড়াও হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ সদস্যরা শত শত মানুষের মাঝ থেকে ওই কিশোরীকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়। পরে ওই কিশোরী প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে।

পোশাকটিতে আরবি অক্ষরে ‘‘হালুয়া’’ শব্দটি মুদ্রিত রয়েছে, যার অর্থ মিষ্টি।

লাহোর পুলিশ বিবিসিকে বলেছে, রবিবার স্থানীয় সময় ১টা ১০ মিনিটে তারা প্রথম একটি টেলিফোন কল পায়। ওই সময় টেলিফোনে পুলিশকে জানানো হয়, পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের একটি রেস্তোরাঁয় এক নারীকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

লাহোর পুলিশের সহকারী সুপারিন্টেনডেন্ট সৈয়দা শেহরবানো বলেন, রেস্তোরাঁর বাইরে প্রায় ৩০০ মানুষ ভিড় করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, রেস্তোরাঁটির এক কোণে বসে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে এক কিশোরী।

অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের নারী ও পুরুষ কর্মকর্তারা তাকে ঘিরে রয়েছেন। আর রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়ানো শত শত উত্তেজিত জনতা ওই কিশোরীর জামা খুলে ফেলার জন্য চিৎকার করছে। এ সময় ধর্ম অবমাননাকারীর শিরশ্ছেদ চাই বলেও লোকজনকে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, রেস্তোরাঁটির প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছেন সৈয়দা শেহরবানো। জনতার ভিড় সামলে সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন তিনি।

পুলিশের এই নারী কর্মকর্তা বলেছেন, জামায় কী লেখা আছে, তা উত্তেজিত জনতার কেউই জানেন না। তবে ওই কিশোরীকে সেখান থেকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসতে পারাই ছিল আমাদের জন্য প্রধান কাজ।

তিনি উত্তেজিত জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছিলাম, আমরা কিশোরীকে আমাদের সাথে নিয়ে যাব। তার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নেয়া হবে এবং দেশের আইন অনুযায়ী কোনও অপরাধ করে থাকলে সেজন্য আমরা তাকে দায়ী করব।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কিশোরীর ঘাড়ে হাত রেখে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা শেহরবানো। এ সময় তার শরীরে কালো পোশাক ও মাথায় স্কার্ফ ছিল। পরে ভিড়ের মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় উত্তেজিত জনতা ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা হাতে হাত রেখে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন।

শেহরবানো বলেছেন, কট্টরপন্থি ইসলামি রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাবাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) সমর্থকরা ভিড়ের মধ্যে ছিলেন। পরে ওই কিশোরীকে থানায় নেয়া হয়। সেখানে কয়েকজন আলেমকে থানায় এনে কিশোরীর জামায় মুদ্রিত আরবি হরফে লেখার বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই কিশোরীর জামায় কোরআনের কোনও আয়াত লেখা ছিল না বলে নিশ্চিত করেন আলেমরা।

পরে আলেমদের এমন মন্তব্যের ভিডিও রেকর্ড ধারণ করা হয়। তারা ভিডিওতে ওই কিশোরীকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেন।

ভিডিওতে ওই কিশোরী বলেছে, আমার এমন কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, এটা ভুলবশত ঘটেছে। তারপরও যা ঘটেছে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ভবিষ্যতে আর এমন কিছু ঘটবে না বলেও নিশ্চিত করছি। আমি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং কখনই ধর্ম অবমাননা করব না।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই কিশোরী কেনাকাটা করার জন্য লাহোরের ইচরা বাজারে গিয়েছিল। তারপর শহর ছেড়ে চলে গেছে।

সূত্র: ডন, বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।