বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন

জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
কুষ্টিয়া পোস্ট ডট কমের জন্য সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান, জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা career@kushtiapost.com ইমেইল এ সিভি পাঠাতে পারেন।

নৌকা ভ্রমণে ভিড়, মাঝিদের বাড়ছে আয়

গাজিপুর প্রতিনিধিঃ

প্রকৃতিতে শরতের আগমন। এখনো বর্ষার রেশ কাটেনি। ভাসছে ফসলি জমি। খাল, বিল, ডোবা, জলাধারগুলো পানিতে পরিপূর্ণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের মানুষের পেশারও বদল হয়েছে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রায় বেশ কিছু অঞ্চল বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে অনেক জায়গা নিজের রূপ হারালেও এখনো এই জলাধারগুলো স্থানীয়দের আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নগদ অর্থের যোগান দিয়ে যাচ্ছে।

বর্ষার পানি আসার সাথে সাথে পেশা বদল করেন এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ। তারা বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যটারিচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও এই সময়টায় মাছ ধরা অথবা নৌকা ভাড়া দিয়ে সংসার চালান।

প্রায় প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসুরা উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা বাজার খেয়া ঘাটে এসে নৌকা ভাড়া করেন। তাদের পছন্দের তালিকায় বাহারি সাজে সজ্জিত নৌকা। সারিবদ্ধভাবে সাজানো এসব নৌকা সময় ভেদে ভাড়া দেওয়া হয়।

যেহেতু এখন চাহিদা বেশি, তাই ভাড়ার পরিমাণও একটু বেশি। ছইয়ের উপরে সামিয়ানা দিয়ে সাজানো নৌকার ভাড়া দিনে ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। গ্রাহকরা দরদাম করে নিলে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার মধ্যেও নিতে পারেন।

নৌকা ভাড়া করতে আসা মো. নাজমুল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবক জানান, তারা প্রতিবছর ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া নেন। অন্য বছরগুলোতে ভাড়া স্বাভাবিক থাকলেও এ বছর নেওয়া হচ্ছে বেশি।

তবে ভাড়া যাই হোক, প্রতিবছর বর্ষার এই সময়টাতে সজ্জিত নৌকা বা ছোট লঞ্চ ভাড়া করে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘোরার মজাই আলাদা। 

উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের কুলথুন গ্রামের বাসিন্দা শিহাব (৩৩) জানান, প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করেন। গত বছর লকডাউন থাকায় ঘুরতে যেতে পারেননি। তবে এ বছর কিছুটা শিথিল থাকায় কলেজের বন্ধুরা মিলে বিল বেলাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরবেন।

ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের সাথে মিলনমেলাও হয়ে গেলো। যেহেতু উলুখোলার এই ঘাটে নৌকা পাওয়া যায়, তাই এখান থেকেই নৌকা ভাড়া করে নেন। একই কথা বলেন উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের আশিক মিয়া (৩০)।  

উলুখোলা খেয়া ঘাটের নৌকা মালিক জাকির মোল্লা (৪৫) বলেন, বর্ষার পানি আসার আগে আমি ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাতাম। সারা দিনে ৫০০ টাকার মতো আয় করতাম।

গত বছর আমার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ২ কাঠা জমি বিক্রি করে একটি নৌকা কিনেছিলাম। চাহিদা বেশি থাকায় এ বছর আরও একটি নৌকা বানাচ্ছি। এখন আগের থেকে বেশ ভালোই আয় করছি।

উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বড়কাউ গ্রামের আরেক নৌকার মালিক আল-আমিন (৩৮) বলেন, শুকনো মৌসুমে আমি কৃষি কাজ করি। এতে সংসার ঠিকমতো চালাতে পারি না। তাই গত বছর শুরুর দিকে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি নিজের জমি বিক্রি করে একটি ভ্রমণ নৌকা বানাই।

গত বছর লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। তবে এ বছর বেশকিছু টাকা আয় করতে পেরেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করছি এ বছর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারবো। আল-আমিনের মতো একই কথা বলেন উপজেলার নাগরী গ্রামের সিরাজ মুন্সি (৪৫) ও বির্তুল গ্রামের ছাত্তার মিয়া (৪৮)।  

নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম অলি বলেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আগে কৃষিজীবী ছিল। পূর্বাচল উপ-শহরের খুব কাছে হওয়ায় খুব দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে এলাকাজুড়ে। স্থানীয়দের পেশাও বদল হচ্ছে।

বালু নদীর উপর উলুখোলা বাজার ঘাট হওয়ায় আশেপাশের এলাকার মানুষের ভিড় জমে এখানে। উদ্দেশ্য নৌকা ভ্রমণ। মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে এখানে একটি স্থায়ী ঘাট নির্মাণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Crafted with by Softhab Inc © 2021
error: আমাদের এই সাইটের লেখা অনুমতি ছাড়া কপি করা যাবে না।