বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রেম করে বিয়ে। এরপর স্বামীর নির্যাতন শুরু। সহ্য করতে না পেরে বিষপান করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌসী শিখা (২০। তিনদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে এসেই আবারও স্বামী নির্যাতন শুরু। এবার আর রক্ষা হয়নি শিখার। স্বামীর নির্যাতনেই চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কোলা গণিপুর গ্রামে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী রিপন হোসেনকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শিখার বাবার বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার হলহলিয়া এলাকায়। স্বামী রিপন হোসেন একই উপজেলার কোলা গণিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতের স্বজন, গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর উপজেলার কোলা গণিপুর গ্রামের রিপন হোসেন পেশায় একজন ভ্যানচালক। প্রায় আড়াই বছর আগে তিনি একই উপজেলার হলহলিয়া গ্রামের লিটন রাজার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী শিখাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে আট মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
সন্তান হওয়ার পর থেকে রিপন তার স্ত্রী শিখাকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। গত দুই মাস ধরে নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। শিখা সহ্য করতে না পেরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিষপান করেন।
ওইদিন দুপুরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসকেরা তাকে ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতাল থেকে বুধবার স্বামীর বাড়িতে এসে বৃহস্পতিবার সকালে শিখা মারা যান।
নিহত শিখার নানি শহিদা বেগম বলেন, শিখা ছোট থাকতে তার মা মারা গেছে। সে আমার কাছে মানুষ হয়েছে। আদরের নাতনি প্রেম করে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে স্বামী তাকে নির্যাতন শুরু করে। কিন্তু সে আমাদেরকে নির্যাতনের কথা বলতো না।
মেয়ে সন্তান হওয়ার পর আরও বেড়ে গিয়েছিল নির্যাতন। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বিষপান করে করেছিল। কিন্তু বেঁচে গেছে। এরপর স্বামীর নির্যাতনেই শিখা মারা গেছে।
স্থানীয় সোনামুখী ইউপি চেয়ারম্যান ডিএম রাহেল ইমাম বলেন, গৃহবধূকে মারপিট করে নির্যাতন করা হতো। কয়েকদিন আগে আত্মহত্যার জন্য বিষপান করেছিল। হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলে আবারো নির্যাতন করা হয়।
আক্কেলপুর থানা পুলিশের ওসি সাইদুর রহমান বলেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে গৃহবধূকে আবারো নির্যাতন করা হয়। মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় নিহতের স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন মামলার তদন্ত চলছে।