বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
যাবজ্জীবন সাজা এড়াতে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন দিনাজপুরের খানসামা দুবলিয়ার এলাকার আমিজ উদ্দিনের ছেলে তসলিম উদ্দিন (৫২)। অবশেষে র্যাব-৩ এর সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় ধর্ষণ এবং গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তসলিম উদ্দিনকে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) তাকে আদালতে পাঠিয়েছে খানসামা থানা পুলিশ।
এর আগে বুধবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর টিকাটুলির র্যাব-৩ কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তরমুজ ব্যবসাসহ নানা পেশার আড়ালে এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানানো হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার তসলিম উদ্দিন ২০০০ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ নামক এনজিওতে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরিরত ছিলেন। ভিকটিম তার অধীনে বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এনজিও থেকে নিয়োগকৃত শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সুবাদে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তসলিম ভুক্তভোগীকে নানাভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রলুব্ধ করে। একাধিকবার ধর্ষণের ফলে ভুক্তভোগী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। পরে একটি ক্লিনিকে গর্ভপাত করান তসলিম। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণসহ ভ্রুণ নষ্ট করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলা হওয়ার পর থেকেই গ্রেপ্তার তসলিম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। এমনকি গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করেন। প্রথম ২ বছর তিনি ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান, এরপর ৩ বছর সিলেটে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ঢাকায় ফেরত এসে একটি লিমিটেড কোম্পানির অর্ডারলি হিসেবে কাজ করেন। রায় হওয়ার পর আত্মগোপনে থাকার উদ্দেশে গাজীপুরে কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনো মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে, কখনো এনজিওর মাঠ কর্মী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে। এনজিওর মাঠকর্মী থাকাকালীন গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে নামে বেনামে প্রতারণার মাধ্যমে সুকৌশলে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় আত্মগোপন করেন।
বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, দিনাজপুর তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম জানান, আমরা র্যাবের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাকে ঢাকা থেকে এনে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।