রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্কঃ
নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে হারল পর্তুগাল। তাদের হারিয়েছে যারা, সেই মরক্কো ইতিহাসও গড়ে ফেলেছে রীতিমতো। এর আগে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে চারটি আফ্রিকান দল, কিন্তু শেষ চারের চৌকাঠ মারানো হয়নি কারোই।
পর্তুগালকে হারিয়ে মরক্কো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতেই দেখা গেল গ্যালারি থেকে নেমে হিজাব পরা এক মহিলা জড়িয়ে ধরেছেন হাকিমিকে। খেলা জিতে মায়ের সঙ্গে উৎসবে মাতলেন মরক্কোর ফুটবলার।
এক দিকে যখন কাঁদতে কাঁদতে টানেল দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, অন্য দিকে তখন আনন্দে পাগলের মতো নাচছেন আশরফ হাকিমি, হাকিম জিয়েচরা। রোনাল্ডোর ছেড়ে যাওয়া মঞ্চে নতুন নায়ক হয়ে উঠছেন তাঁরা। ঠিক তখনই দেখা গেল গ্যালারি থেকে নেমে এলেন হিজাব পরা এক মহিলা। জড়িয়ে ধরলেন হাকিমিকে। কে তিনি?
তিনি হাকিমির মা। ছেলের খেলা দেখতে এসেছেন। ছেলে স্বপ্ন পূরণ করেছে তাঁর। তাই নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি। মাকে দেখে চোখের জল বাঁধ মানল না হাকিমির। অনেক ক্ষণ মাকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন তিনি। তার পরে আবার ছুটে গেলেন দলের কাছে।
মরক্কো দলটি নিয়ে বিশ্বকাপের আগে যতবার আলোচনা হয়েছে, ততবার এসেছে আশরাফ হাকিমির নাম। হাকিমি দলটির সবচেয়ে বড় তারকা। হাকিমির মায়ের নাম সৈয়দা মৌহ। হাকিমির বাবা ছিলেন হকার।
চব্বিশ বছর বয়সী আশরাফ হাকিমি বলেছেন, তার মা মানুষের বাড়ি পরিস্কার করে অর্থ উপার্জন করতেন একটা সময়। আরো বলেন, “আমরা যে পরিবার থেকে এসেছি, আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমি এখন প্রতিদিন তাদের জন্য লড়াই করি। তারা আমার জন্য ত্যাগ শিকার করেছেন। আমার ভাইয়েরা এমন অনেক সুবিধা পাননি যা আমার সফলতার জন্য দেয়া হয়েছে।”
মরক্কোর হয়ে খেললেও হাকিমির জন্ম স্পেনের মাদ্রিদে। ২০১৬ সালে রিয়াল মাদ্রিদ কিনেছিল তাঁকে। কিন্তু এক মরসুম পরেই লোনে পাঠিয়ে দিয়েছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে। সেখান থেকে ২০২০ সালে ইন্টার মিলান হয়ে এখন তিনি খেলেন প্যারিস সঁ জরমঁতে। মেসির ক্লাব, নেমার, এমবাপের ক্লাবে খেলার পাশাপাশি দেশের জার্সিতে মরক্কোর অন্যতম ভরসার জায়গা হাকিমি। এ বারের বিশ্বকাপে দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন তিনি। দলকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তোলার পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছেন হাকিমি। খেলা শেষে আরও এক মাকে দেখা গেল মাঠে। তিনি মরক্কোর আর এক ফুটবলার বৌফালের মা। মাঠে নেমে ছেলের সঙ্গে উৎসবে মাতলেন তিনিও।
হাকিমি নিজে অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর ফুটবলার হওয়ার পিছনে সব থেকে বড় অবদান তাঁর মায়ের। ছেলে ফুটবলার হলেও এখনও নিজের পেশা ছাড়েননি তিনি। নিজে উপার্জন করতে চান। ফুটবল জীবনের সেরা দিনে তাই মাকে জড়িয়ে উৎসব করলেন হাকিমি।